রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার ও রাবার জাতীয় বর্জ্য পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে জ্বালানি তেল ও কার্বন। আবাসিক এলাকার পাশে কৃষি জমিতে গড়ে তোলা এ কারখানার কালো ধোঁয়া, দুর্গন্ধ ও বিষাক্ত গ্যাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের এলাকায়। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন স্থানীয়রা। তবে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস উপজেলা প্রশাসনের।
উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের বিশ্বনাথ পাড়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আবাসিক এলাকার পাশে ফসলি জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে ‘ঢাকা পাইরোলাইসিস কোম্পানি’ নামে একটি কারখানা। এ কারখানায় পুরানো টায়ার ও রাবার জাতীয় বর্জ্য পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে জ্বালানি তেল ও কার্বন। যা থেকে বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া। এতে বাতাসে ছড়াচ্ছে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ও মিথেনসহ বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর রাসায়নিক গ্যাস।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় চার বিঘা জমির ওপর কারখানাটি নির্মাণ করা হয় ২০২৩ সালে। কারখানার পোড়া টায়ারের উৎকট গন্ধ আর বাতাসে ওড়া কার্বনে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা, কমে গেছে ফসলের উৎপাদন। কারখানার শ্রমিকদেরও দেয়া হয়নি বিশেষ পোশাক।
স্কুলছাত্র তরিকুল ইসলাম বলে, ‘এই কারখানার পাশ দিয়েই আমাদের স্কুলে যাতায়াতের রাস্তা। দুর্গন্ধে এখান দিয়ে যাতায়াত করতে খুব কষ্ট হয়। এছাড়া আমাদের ঘরে এই কারখানার ছাই ঢুকে যায়। পড়ার টেবিলে ও বইয়ের মধ্যে কালি পড়ে।’
গৃহবধূ আমেনা বেগম বলেন, ‘এ কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া খাবারের ভেতরে গিয়ে কালি পড়ে। বিছানায় কালি পড়ে বিছানা নষ্ট হয়ে যায়। ধোঁয়া ও দুর্গন্ধের কারণে রাতে ঘরে থাকা কষ্ট হয়ে যায়। বাচ্চারা ঘুমাতে পারে না। দূষিত ধোঁয়ার কারণে শিশু ও বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’
কৃষক রইসুল ইসলাম রতন বলেন, ‘ধোঁয়ার সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে। এসব পদার্থ বাতাসের সঙ্গে মিশে গাছপালায় লাগে। এতে এলাকার গাছপালায় কোনো ফল হয় না। এ কারখানার কারণে আশপাশের এলাকার ফসলি জমিরও উৎপাদন কমে গেছে। আমরা জমিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেও ফলন বাড়তে পারছিনা। তাই দ্রুত এই কারখানাটি এখান থেকে অপসারণ করার দাবি জানাই।’
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, ‘কারখানার বিষয়টি আমি শুনছি। আমি সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করবো। যদি এই কারখানার কারণে জনসাধারণের কোন ক্ষতি হয়, তাহলে কারখানার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে কারখানায় গিয়ে দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। কর্মরত শ্রমিকরা কেউ কথা বলতে চাননি। তবে কারখানার ক্রয়-বিক্রয় রশিদে দেয়া মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে অপর প্রান্ত থেকে ফোন রিসিভ করে নিজেকে কোম্পানির ম্যানেজার পরিচয় দেন। তবে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কারখানার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করতেই উত্তেজিত হয়ে ফোনটি কেটে দেন তিনি।