তাসাউফভিত্তিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দেওয়ানবাগ শরীফসহ দেশের বিভিন্ন দরবার ও মাজারে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেওয়ানবাগ দরবার শরীফের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা হুজুর। সোমবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তার পক্ষে এই আহ্বান জানান সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুল আজিজ খলিফা।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, দেওয়ানবাগ শরীফ কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত নয়। মানুষের প্রতি দয়া, প্রেম, ভালোবাসা প্রদর্শন এবং নিজেদের চরিত্র গঠনের মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসুল (সা.) এর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যেই এই প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তারপরও কেন, কার স্বার্থে বার বার মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেওয়ানবাগ শরীফে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হচ্ছে? প্রশ্ন রাখেন আবদুল আজিজ খলিফা।
সংবাদ সম্মেলনে দেওয়ানবাগ শরীফের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুস সালাম, ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হসপিটালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দেওয়ান ফারুকুল ইসলাম, বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জন ডা. মো. আমিনুল ইসলাম, আল কোরআন গবেষণা কেন্দ্রের সদস্য হযরতুল আল্লাম এমরান হোসাইন মাজহারী ও ইসলামী আলোচক হযরতুল আল্লাম সাব্বির আহমদ ওসমানী সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিইউবি’র সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ নাছিরউদ্দীন সোহেল।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, গত ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ইং, শুক্রবার সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত নারায়ণঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন দেওয়ানবাগ গ্রামে অবস্থিত বাবে জান্নাত দেওয়ানবাগ শরীফে এবং ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ইং, রবিবার ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলাধীন বাবে বরকত দেওয়ানবাগ শরীফে হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, লুটপাট এবং সংশ্লিষ্ট দরবার দুটিতে অবস্থানরত নিরীহ ভক্তবৃন্দের উপর দুর্বৃত্তরা শারীরিক নির্যাতন চালায়। এরফলে শতাধিক ভক্তবৃন্দ মারাত্মক আহত হন এবং একজন মৃত্যুবরণ করেন। এরা ইতিপূর্বে ১৯৯০ সাল ও ১৯৯৯ সালেও দেওয়ানবাগ দরবার শরীফে হামলা চালিয়েছিল।
তরিকতপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, আজকের এই সংকট দেওয়ানবাগ শরীফের একার নয়। এই সংকট বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় সুফিবাদী জনগোষ্ঠীর। সকল তরিকতপন্থী মানুষের। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে এসব জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার এখুনি সঠিক সময়। তাই সকল তরিকতপন্থি ও সুফিবাদীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই, আসুন। সকল মতানৈক্য ভুলে আমরা একত্রিতভাবে শান্তি বিনষ্টকারী এই জালিমদের প্রতিহত করি। অলী-আল্লাহর এই পুণ্যভূমিতে শান্তি-সাম্য ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করি।
সংবাদ সম্মেলনে আলোচকগণ বলেন, তরিকতপন্থীগণ বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থার ভারসাম্য রক্ষায় মুখ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। তাই শান্তিপ্রিয় সুফিপন্থী জনগোষ্ঠীর কার্যক্রমে সন্ত্রাসী কায়দায় বাধা দিয়ে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে, সরকারকে সেই বিষয়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।