ঢাকা ০৭:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জুলুম-অন্যায়কে বিএনপি প্রশ্রয় দেবে না নাগেশ্বরীতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ পছন্দের বিয়ের বিপক্ষে অধিকাংশ পাকিস্তানি সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের জরুরি সভা ডাকল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শাহজালাল বিমানবন্দরে ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ গ্রেফতার জেলা গোয়েন্দা শাখা, পাবনার অভিযানে ০৩(তিন) কেজি গাঁজা সহ দুইজন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনার মামলার বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি ,১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি । বেরোবিতে জুলাইয়ে বিপ্লবের বিরোধিতা কারী ক্যাম্পাসে দাপটে চলেন ক্ষমতার উৎস কোথায় মির্জা ফখরুলের স্ট্যাটাস ঘিরে নানা ধরনের আলোচনা

ভোটের আগে ৪৫০০ গাড়ি চায় পুলিশ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাড়ে ৪ হাজার নতুন গাড়ি চায় পুলিশ। এর মধ্যে ৪৩২টি জিপসহ (এসইউভি) ৪ হাজার ৫২৯টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন রয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ পেয়েছিল ১ হাজার ৭০৯টি গাড়ি। দুটি পৃথক উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পুলিশের জন্য যানবাহনগুলো কেনা হয়েছিল। এবারও উন্নয়ন প্রকল্প বা বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে যানবাহন সংকট নিরসনের প্রস্তাব দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। 

গত তিন অর্থবছরে ৬৬৫টি মোটরসাইকেলসহ ১০১৭টি যানবাহন পুলিশের জন্য কেনা হয়েছে। নতুন জনবল সৃষ্টি ও পদোন্নতির কারণে জরুরি ভিত্তিতে আরও ৪২৩টি এসইউভি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল) প্রয়োজন। পাশাপাশি নির্বাচনকালীন যানবাহন বাবদ ২২৬ কোটি ৫ লাখ টাকা ও জ্বালানি বাবদ ২০৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৯ হাজার ৬১০ টাকা বাজেটের অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। তারা বলছে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কেনা গাড়ি দিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ (ডিএমপি) সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কার্যক্রম সচল রাখা হয়েছে। এবার নির্বাচনের আগে যেসব গাড়ি কেনা হবে সেগুলোও নির্বাচনের পরে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে ব্যবহৃত হবে।

সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচনের আগে ও পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য সময়ের তুলনায় পুলিশকে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে মাঠে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশের দায়িত্ব পালনের জন্য অপারেশনাল সক্ষমতা হিসেবে যানবাহন বাড়ানোর বিকল্প নেই।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মেট্রোপলিটন ও জেলা সদর থানাগুলোতে দুটি করে পিকআপ থাকলেও দেশের ১৯০টি থানায় এখনও মাত্র একটি করে ডাবল কেবিন পিকআপ দিয়ে দায়িত্ব পালন করে পুলিশ। একটি পিকআপ দিয়ে কোনোভাবেই পুরো থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে আশার কথা হচ্ছে, ডাবল কেবিন ১০০টি পিকআপ কেনার অনুমোদন পাওয়া গেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এক চিঠিতে বলা হয়, রাজস্ব বাজেটে বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সব সরকারি বা আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মতো পুলিশেও একই ধরনের নির্দেশনা ও শর্ত জারি করা হয়। দেশের ভেতরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি জনগণের নিরাপত্তা, জানমাল রক্ষা, সরকারি সম্পত্তি রক্ষা, ভিআইপি ও ভিভিআইপি নিরাপত্তা ডিউটি পালন, জাতীয়-আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা, কেপিআই স্থাপনার নিরাপত্তা, উন্নয়ন প্রকল্প ও শিল্পকারখানার নিরাপত্তা দিয়ে আসছে পুলিশ। এ ধরনের নিরাপত্তাসংক্রান্ত কার্যক্রম সীমিত করার কোনো সুযোগ নেই বরং দিন দিন তা বাড়ছে। তাই পুলিশের ক্ষেত্রে এসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য যানবাহন বাড়ানো জরুরি।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, রাজস্ব বাজেটের মাধ্যমে পুলিশের দীর্ঘদিনের যানবাহন সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। রাজস্ব বাজেট ব্যয়ের ক্ষেত্রে সব সরকারি বা আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থার মতো পুলিশের জন্যও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একই নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু পুলিশ অন্যান্য সংস্থার মতো একই দায়িত্ব পালন করে না। কাজেই পুলিশের ক্ষেত্রে ক্রয় কার্যক্রমকে সাধারণ নির্দেশনা বা শর্তের বাইরে রেখে বিকল্প চিন্তা করা জরুরি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পুলিশে টিওএন্ডই (সরকারি দপ্তরে সাংগঠনিক কাঠামো) ভুক্ত যানবাহনের ঘাটতি এবং বিপুলসংখ্যক যানবাহন অকেজো ঘোষণার ফলে সৃষ্ট ঘাটতিজনিত যানবাহন রাজস্ব বাজেট থেকে বিশেষ বরাদ্দ বা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে কেনা আবশ্যক।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বর্তমানে পুলিশে অনুমোদিত যানবাহনের সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৮৬টি। এর মধ্যে অপারেশনাল যানাহন ৬ হাজার ২৫৫টি। মোটরসাইকেল ৯ হাজার ৭৩১টি। বর্তমানে পুলিশের যানবাহন আছে ১১ হাজার ৯২৩টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল আছে ৬ হাজার ৪৪৫টি। সব মিলিয়ে যানবাহনের ঘাটতি আছে ৪ হাজার ৫২৯টি।

পুলিশ জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক অকেজো (বাতিল) ঘোষিত ২ হাজার ৭৬৩টি যানবাহনের মধ্যে ১ হাজার ৯৮৮টি যানবাহন বিক্রি করে কিছু অর্থ আয় হয়। এই অর্থ চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। সেসব অর্থ পুলিশকে ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু সেসব অর্থ এখন পর্যন্ত ফেরত পায়নি পুলিশ। এ ছাড়া পুলিশে ২০ বছরের বেশি পুরোনো যানবাহন থেকে আরও ৭৩৮টি যানবাহন অকেজো ঘোষণার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। যানবাহনগুলো অকেজো ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত সেগুলোর বিপরীতে নতুন যানবাহন কেনা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে দেরির কারণে ব্যবহার অনুপযোগী যানবাহনের বিক্রয় মূল্য কমে যাচ্ছে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

পুলিশে বাজেট ব্যয়-সংক্রান্ত তথ্যে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ বাজেটের ৪০ শতাংশ, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১৫ শতাংশ এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেটের ৫০ শতাংশ ব্যয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতেই রাজস্ব বাজেটে যানবাহন, জলযান, আকাশযান ক্রয়ে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, নবসৃষ্ট পদে শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা এসপি, অ্যাডিশনাল ডিআইজি, ডিআইজি পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এসইউভি বা জিপ গাড়ি কম থাকায় পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যানবাহন বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না। টিওএন্ডই অনুযায়ী বর্তমানে ৪২৩টি জিপ (এসইউভি) গাড়ির ঘাটতি রয়েছে, যা মোট অনুমোদিত জিপের অর্ধেক। জরুরি ভিত্তিতে ৪২৩টি জিপ কেনা আবশ্যক।

প্রসঙ্গত, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আনসারসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জন্য মোট ২৫ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। ২০২২-২৩ বছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। ওই বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। বরাদ্দের পুরো অর্থ ব্যয় করতে চায় পুলিশসহ জননিরাপত্তা বিভাগের অধীনস্থ দপ্তরগুলো।

নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা ও পুলিশর যানবাহন সংকট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন কমিশন যে আদেশ দেবে পুলিশ সে অনুযায়ী কাজ করবে। বাংলাদেশ পুলিশ শত বছরের পুরোনো একটি প্রতিষ্ঠান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ পুলিশের জনবল বেড়েছে, লজিস্টিকস বেড়েছে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা তদন্ত করছি। আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে পুলিশের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে অনুযায়ী আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতিও আছে। যানবাহন সংকটসহ যেসব সমস্যা আছে সেগুলো দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।’

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জুলুম-অন্যায়কে বিএনপি প্রশ্রয় দেবে না

ভোটের আগে ৪৫০০ গাড়ি চায় পুলিশ

আপডেট সময় ০২:৫৭:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জুলাই ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাড়ে ৪ হাজার নতুন গাড়ি চায় পুলিশ। এর মধ্যে ৪৩২টি জিপসহ (এসইউভি) ৪ হাজার ৫২৯টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন রয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ পেয়েছিল ১ হাজার ৭০৯টি গাড়ি। দুটি পৃথক উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পুলিশের জন্য যানবাহনগুলো কেনা হয়েছিল। এবারও উন্নয়ন প্রকল্প বা বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে যানবাহন সংকট নিরসনের প্রস্তাব দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। 

গত তিন অর্থবছরে ৬৬৫টি মোটরসাইকেলসহ ১০১৭টি যানবাহন পুলিশের জন্য কেনা হয়েছে। নতুন জনবল সৃষ্টি ও পদোন্নতির কারণে জরুরি ভিত্তিতে আরও ৪২৩টি এসইউভি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল) প্রয়োজন। পাশাপাশি নির্বাচনকালীন যানবাহন বাবদ ২২৬ কোটি ৫ লাখ টাকা ও জ্বালানি বাবদ ২০৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৯ হাজার ৬১০ টাকা বাজেটের অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। তারা বলছে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কেনা গাড়ি দিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ (ডিএমপি) সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কার্যক্রম সচল রাখা হয়েছে। এবার নির্বাচনের আগে যেসব গাড়ি কেনা হবে সেগুলোও নির্বাচনের পরে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে ব্যবহৃত হবে।

সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচনের আগে ও পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য সময়ের তুলনায় পুলিশকে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে মাঠে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশের দায়িত্ব পালনের জন্য অপারেশনাল সক্ষমতা হিসেবে যানবাহন বাড়ানোর বিকল্প নেই।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মেট্রোপলিটন ও জেলা সদর থানাগুলোতে দুটি করে পিকআপ থাকলেও দেশের ১৯০টি থানায় এখনও মাত্র একটি করে ডাবল কেবিন পিকআপ দিয়ে দায়িত্ব পালন করে পুলিশ। একটি পিকআপ দিয়ে কোনোভাবেই পুরো থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে আশার কথা হচ্ছে, ডাবল কেবিন ১০০টি পিকআপ কেনার অনুমোদন পাওয়া গেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এক চিঠিতে বলা হয়, রাজস্ব বাজেটে বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সব সরকারি বা আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মতো পুলিশেও একই ধরনের নির্দেশনা ও শর্ত জারি করা হয়। দেশের ভেতরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি জনগণের নিরাপত্তা, জানমাল রক্ষা, সরকারি সম্পত্তি রক্ষা, ভিআইপি ও ভিভিআইপি নিরাপত্তা ডিউটি পালন, জাতীয়-আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা, কেপিআই স্থাপনার নিরাপত্তা, উন্নয়ন প্রকল্প ও শিল্পকারখানার নিরাপত্তা দিয়ে আসছে পুলিশ। এ ধরনের নিরাপত্তাসংক্রান্ত কার্যক্রম সীমিত করার কোনো সুযোগ নেই বরং দিন দিন তা বাড়ছে। তাই পুলিশের ক্ষেত্রে এসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য যানবাহন বাড়ানো জরুরি।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, রাজস্ব বাজেটের মাধ্যমে পুলিশের দীর্ঘদিনের যানবাহন সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। রাজস্ব বাজেট ব্যয়ের ক্ষেত্রে সব সরকারি বা আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থার মতো পুলিশের জন্যও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একই নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু পুলিশ অন্যান্য সংস্থার মতো একই দায়িত্ব পালন করে না। কাজেই পুলিশের ক্ষেত্রে ক্রয় কার্যক্রমকে সাধারণ নির্দেশনা বা শর্তের বাইরে রেখে বিকল্প চিন্তা করা জরুরি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পুলিশে টিওএন্ডই (সরকারি দপ্তরে সাংগঠনিক কাঠামো) ভুক্ত যানবাহনের ঘাটতি এবং বিপুলসংখ্যক যানবাহন অকেজো ঘোষণার ফলে সৃষ্ট ঘাটতিজনিত যানবাহন রাজস্ব বাজেট থেকে বিশেষ বরাদ্দ বা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে কেনা আবশ্যক।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বর্তমানে পুলিশে অনুমোদিত যানবাহনের সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৮৬টি। এর মধ্যে অপারেশনাল যানাহন ৬ হাজার ২৫৫টি। মোটরসাইকেল ৯ হাজার ৭৩১টি। বর্তমানে পুলিশের যানবাহন আছে ১১ হাজার ৯২৩টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল আছে ৬ হাজার ৪৪৫টি। সব মিলিয়ে যানবাহনের ঘাটতি আছে ৪ হাজার ৫২৯টি।

পুলিশ জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক অকেজো (বাতিল) ঘোষিত ২ হাজার ৭৬৩টি যানবাহনের মধ্যে ১ হাজার ৯৮৮টি যানবাহন বিক্রি করে কিছু অর্থ আয় হয়। এই অর্থ চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। সেসব অর্থ পুলিশকে ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু সেসব অর্থ এখন পর্যন্ত ফেরত পায়নি পুলিশ। এ ছাড়া পুলিশে ২০ বছরের বেশি পুরোনো যানবাহন থেকে আরও ৭৩৮টি যানবাহন অকেজো ঘোষণার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। যানবাহনগুলো অকেজো ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত সেগুলোর বিপরীতে নতুন যানবাহন কেনা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে দেরির কারণে ব্যবহার অনুপযোগী যানবাহনের বিক্রয় মূল্য কমে যাচ্ছে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

পুলিশে বাজেট ব্যয়-সংক্রান্ত তথ্যে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ বাজেটের ৪০ শতাংশ, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১৫ শতাংশ এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেটের ৫০ শতাংশ ব্যয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতেই রাজস্ব বাজেটে যানবাহন, জলযান, আকাশযান ক্রয়ে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, নবসৃষ্ট পদে শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা এসপি, অ্যাডিশনাল ডিআইজি, ডিআইজি পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এসইউভি বা জিপ গাড়ি কম থাকায় পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যানবাহন বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না। টিওএন্ডই অনুযায়ী বর্তমানে ৪২৩টি জিপ (এসইউভি) গাড়ির ঘাটতি রয়েছে, যা মোট অনুমোদিত জিপের অর্ধেক। জরুরি ভিত্তিতে ৪২৩টি জিপ কেনা আবশ্যক।

প্রসঙ্গত, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আনসারসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জন্য মোট ২৫ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। ২০২২-২৩ বছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। ওই বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। বরাদ্দের পুরো অর্থ ব্যয় করতে চায় পুলিশসহ জননিরাপত্তা বিভাগের অধীনস্থ দপ্তরগুলো।

নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা ও পুলিশর যানবাহন সংকট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন কমিশন যে আদেশ দেবে পুলিশ সে অনুযায়ী কাজ করবে। বাংলাদেশ পুলিশ শত বছরের পুরোনো একটি প্রতিষ্ঠান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ পুলিশের জনবল বেড়েছে, লজিস্টিকস বেড়েছে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা তদন্ত করছি। আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে পুলিশের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে অনুযায়ী আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতিও আছে। যানবাহন সংকটসহ যেসব সমস্যা আছে সেগুলো দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।’