’৭৫ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনসহ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মরহুম ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী (দাদাভাই)। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ক্ষমতায় আসে মোশতাক সরকার। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেন তিনি।
১৯৩৪ সালে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী দাদা ভাই। বাবা নুরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এবং মা চৌধুরী ফাতেমা বেগম, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় বোন। দাদাভাই এর শিক্ষা জীবন শুরু হয় দত্তপাড়ার টিএন একাডেমী থেকে, মুন্সিগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাশ করেন।
১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে কাজ করেন নিরলসভাবে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন, একই সঙ্গে মুজিব বাহিনীর কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পেছনেও দাদাভাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এক সময়ের জনপ্রিয় দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি ছিলেন ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী দাদাভাই। আরামবাগ ক্রীড়াচক্র ও খুলনা আবহানী ক্রীড়াচক্রের সভাপতি ছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন খুলনা অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন মালিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
তৎকালীন জাতীয় সংসদে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের প্রস্তাবকারী ছিলেন দাদাভাই। এছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীকে ২০২২ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে।
পদ্মা পাড়ের এক সময়ের পিছিয়ে পড়া জনপদ শিবচরের নারী শিক্ষার অগ্রদূত দাদাভাই। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শিবচরের গুয়াতলা গ্রামে তার একক প্রচেষ্টায় ১৯৭৪ সালের ১ জানুয়ারি শিবচরে প্রতিষ্ঠিত হয় শেখ ফজিলাতুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এছাড়াও তিনি অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা।
১৯৯১ সালের ১৯ মে পঞ্চম জাতীয় সংসদের সদস্য থাকাকালীন অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে এই মহান নেতা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শুক্রবার (১৯ মে) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতীয় সংসদের সাবেক সংসদ সদস্য ও গণপরিষদের প্রাক্তন সদস্য, বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক, সমাজ সেবক মরহুম ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী (দাদাভাই)-এর ৩২ তম মৃত্যুবার্ষিকী।
এই মহান নেতার মুত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার (১৯ মে) শিবচরের দত্তপাড়ায় তার নিজ বাড়িতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। তার বড় ছেলে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী ও কনিষ্ঠ ছেলে ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন চৌধুরী) এবং তার পরিবার মরহুম ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন।
আমাদের মাতৃভূমি/মাজহারুল