পোশাক বিশ্বের যে কোনও জায়গায় সাংস্কৃতিক পরিচয় হিসাবে কাজ করে। জামাকাপড় এবং ফ্যাশন ইতিহাস, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক পরিবর্তন এবং, একটি স্থান সময়ের সাথে অভিজ্ঞতার ফলস্বরূপ। এটি কেবল সংস্কৃতির একটি দুর্দান্ত সূচক তৈরি করে না তবে এটি কোনও ব্যক্তিকে তাদের সংস্কৃতির সাথে যে পরিমাণ যুক্ত করেছে তাও প্রকাশ করে।
পোশাককে শালীনতার প্রতীক মনে করা হয়। মানুষের সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বের প্রভাব ফুটে ওঠে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা পোশাক পরিধানের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘হে আদাম সন্তান! আমরা তোমাদেরকে পোশাক-পরিচ্ছদ দিয়েছি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার জন্য এবং শোভা বর্ধনের জন্য। আর তাক্বওয়ার পোশাক হচ্ছে সর্বোত্তম। ওটা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে একটি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ -(সুরা আরাফ, আয়াত,২৬)
বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল ভেদে পোশাকের বৈচিত্র রয়েছে। একেক অঞ্চলে পরিস্থিতি বিবেচনায় ভিন্ন পোশাককে মর্যাদা ও ঐতিহ্যের মনে করা হয়। সৌদি আরব-কাতার ও বিভিন্ন আরব দেশে আবায়া (আলখাল্লা) ‘বিশত’ (Bisht) নামে একটি পোশাকের প্রচলন রয়েছে। আরবদের অনুকরণে বিভিন্ন মুসলিম দেশে এই পোশাক পরার চল রয়েছে।
সম্প্রতি এই পোশাক সবার আগ্রহ ও আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই পোশাকটি সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি হয়েছে অনেকে।
‘বিশত’ (Bisht) বা ‘আবায়া’ সম্পর্কে সৌদি সংবাদ মাধ্যম আরব নিউজ জানায়, এটি আরব অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী পোশাক যা উঁচু সম্মান-মর্যাদা ও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন আরব ও মুসলিম দেশে বিশেষভাবে স্মরণীয় মুহূর্তগুলোতে তা পরা হয়।
সংবাদ মাধ্যটিতে বলা হয়, এই অঞ্চলের রাজপরিবারের সদস্য, রাজনীতিবিদ, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা তা পরে আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন। তা ছাড়া কাউকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদানের অংশ হিসেবে তা পরিয়ে দেওয়ার প্রচলন রয়েছে।
ঢিলেঢালা লম্বা পোশাকটি সাধারণত কালো রঙের হয়ে থাকে। তবে এর সাদা, সোনালীসহ বিভিন্ন রঙ রয়েছে। সাধারণত তা নানা ধরনের উল থেকে তৈরি করা হয়। উট বা লামার চুল বা ছাগল বা ভেড়ার উল ব্যবহার করে হাতে সেলাই করা হয়। হস্তশিল্পের এই ধারা বংশপরম্পরায় ধরে রেখেছেন স্থানীয়রা।
মূল্যবান উলের তারতম্যে পোশাকটির দামেও তারতম্য হয়ে থাকে। এর হাতা ও কলারে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এমব্রয়ডারি, যার সেলাইয়ে রয়েছে খাঁটি সোনা ও রূপার প্রলেপ। এ ধরনের পোশাকের দাম প্রায় চার শত মার্কিন ডলার থেকে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত।
বর্তমানে বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে এই পোশাক। প্রতিটি ‘বিশত’ নকশাভেদে ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। এর বেশির ভাগই যায় সৌদি আরবে কিংবা কাতারে।