দিন রাত সমানতালে মশার উৎপাতে ডেঙ্গু আতংকে রয়েছে রামগঞ্জ পৌরবাসী। মশক নিধনে গত এক বছরে কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি পৌর কতৃপক্ষ।
এতে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করছে পৌর বাসিন্দারা। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে মাত্রাতিরিক্ত মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পৌর এলাকার বাসিন্দারা। মশার উপদ্রব অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় দিনরাত সমানতালে সরকারি- বেসরকারি অফিস, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হোটেলগুলোসহ বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে ও বাসা বাড়িতে মশার কয়েল কিংবা এ্যারোসল ছিটিয়ে মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা গেছে, রামগঞ্জ পৌরসভাটি প্রথম শ্রেনীর একটি পৌরসভা। এটি ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। পৌরকার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ন এই শহরের প্রায় সর্বত্রই ময়লা আবর্জনা ও প্রতিটি ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ঝোপঝাড়পূর্ণ হয়ে আছে। শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও নর্দমাগুলো পরিষ্কার না করা এবং পৌর সভার বিভিন্ন জাগায় ময়লা আবর্জনার স্তুপ থাকায় মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এছাড়া পৌর শহরে বিভিন্ন স্থানে ঝোপঝাড়পূর্ণ থাকায় ও নিয়মিত মশা নিধনে কীটনাশক স্প্রে ব্যবহার না করায় এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার নাগরিকদের। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায় , গত ২০ দিনে ১৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগী পৌর এলাকার বাসিন্দা। এদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু।
এছাড়া হাসপাতালের আউটডোরে ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা অনুযায়ী ঔষধ নিয়ে বাড়িতে চলে যায় অনেকেই। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিকালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আল- জোবায়ের (১৭) নামের একজন হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরে তার প্লাটিলেট কাউন্ড কমে গেলে রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেপার করে কর্তব্যরত চিকিৎসক।
৩ ডিসেম্বর শনিবার সকালে সরেজমিনে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ওয়ার্ডে ছড়িয়ে আছে পরিত্যাক্ত ছোট ছোট ডোবা-নালা। অধিকাংশ ড্রেনে পানিপ্রবাহ নেই। জমে থাকা পানিতে বংশবিস্তার করছে মশা। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ময়লা-আবর্জনা জমে ভরাট হয়ে গেছে ড্রেনগুলো। অপরিকল্পিতভাবে খালে ময়লা ফেলার কারনে খালে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। পানি প্রবাহ না থাকায় পুরো খাল জুড়েই মশার নিরাপদ প্রজননক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে।
কয়েকজন পৌর বাসিন্দা জানান, গত একবছরে মশার ঔষধ ছিটায়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। মশার উৎপাতে পৌরসভার ৯ টি ওয়ার্ডেই অতিষ্ঠ পৌরবাসী। পৌর শহরের আনাচে – কানাচে , মশার প্রজননস্থল বিভিন্ন নালা-নর্দমায় ও জমে থাকা পানিতে গত এক বছরে পৌর কর্তৃপক্ষের মশক নিধন কোনো কার্যক্রম নেই । কয়েল কিংবা আগুন দিয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করেও মশার কামড় থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। ময়লা-আবর্জনার স্তূপে বৃদ্ধি পাচ্ছে মশার প্রজনন। মশার কামড়ে মানুষই নয়, গৃহপালিত পশু অস্বস্তিতে রয়েছে। শিশু, বৃদ্ধ ও হাসপাতালে ভর্তি রোগী এমনকি মসজিদের মুসল্লিরা মশার কষ্টে আছেন।
এছাড়া পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের ড্রেন-নর্দমায় পানি জমে তা মশা উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। এতে করে মশাবাহিত ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি অসুখ-বিসুখ ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া আছে অপরিচ্ছন্ন জলাশয় ও লেক। সব মিলিয়ে পৌর এলাকার পাড়া-মহল্লা ও অলি-গলিতে মশার বংশ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে, যা পৌরবাসীর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তা নজির আহমেদ বলেন, মশার উৎপাত দিন দিন বেড়েই চলেছে। স্প্রে ছিটিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না।
মশার উৎপাতে অফিস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মরিয়ম, হাবিব, কামরুলসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, মশার উৎপাতে তাদের লেখাপড়া করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। নির্বিঘ্নে টেবিলে বসে পড়ার কোনো উপায় নেই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মশার তীব্র উৎপাতে মশারির ভেতরে বসেই পড়তে হচ্ছে তাদের। জিয়া শপিং কমপ্লেক্সের কয়েকজন ব্যাবসায়ী বলেন, মশার উৎপাতে দোকানে বসা যায় না। কয়েল জ্বালিয়ে কিংবা স্প্রে ছিটালেও মশার উৎপাত কমে না। এডিস মশার আতংকে মার্কেটে কাস্টমার কমে গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গুনময় পোদ্দার বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সংখ্যা বাড়ছে। এডিস মশা সাধারনত ভোর ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। মশার কামড় থেকে বাঁচতে এসময় অবশ্যই মশারী টানাতে হবে। মশার ঔষধ ছিটিয়ে মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করে দিলে মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। পৌর মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী বলেন, মশার বংশবৃদ্ধি ও উৎপাত রোধে প্রজননক্ষেত্রে শীঘ্রই মশক নিধনে মশার স্প্রে করা হবে। বন্ধ হওয়ায় ড্রেন পরিস্কার করা হবে।
এসময় তিনি আরও বলেন, মশার ঔষধ ছিটানোর পাশাপাশি জনসচেতনতার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। পৌরবাসী যদি তাদের নিজ নিজ বাসস্থান ও আশপাশ এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে এবং মশা জন্মানোর ও এর বংশ বিস্তারের সুযোগ না দেয়, তাহলে মশার উপদ্রব থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যেতে পারে।