ঢাকা ০৩:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমলে কাসির কী? এর কারণে নামাজে যে সমস্যা হয়

মনোযোগ ও একাগ্রতা নামাজের প্রাণ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তাকে তুমি দেখতে পাচ্ছো। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০; মুসলিম, হাদিস : ৮)

মানুষের মন-মস্তিষ্ক কখনো বেকার থাকে না। আর নামাজে দাঁড়ালে শয়তান বারবার মানুষের মনোযোগ বিভিন্ন দিকে ফিরিয়ে নিতে চায়। কিন্তু যেকোনোভাবে মনোযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করতে হয়। সুতরাং নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই কল্পনা (মুখে উচ্চারণ ছাড়া) ধরে রাখার অনুশীলন করা উচিত যে, ‘আল্লাহ আমাকে দেখছেন’।

মনোযোগ ধরে রাখার পাশাপাশি নামাজ যেন নষ্ট না হয়, ভেঙ্গে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। নামাজ যেসব কারণে ভেঙ্গে যায় তার একটি হলো- আমলে কাসির। কারো নামাজে আমলে কাসির ঘটলে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। এর কারণে আবার নতুন করে নামাজ পড়তে হয়।

ফুকাহায়ে কেরামের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত অনুযায়ী ‘আমলে কাসির’ বলা হয়, নামাজে এমন নড়াচড়াকে যে কারণে নামাজের বাইরের কেউ দেখলে মুসল্লি সম্পর্কে তার নিশ্চিত ধারণা জন্মে যে, এই মুসল্লি এখন আর নামাজে নেই। এ ধরনের কাজের মাধ্যমে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। 

কিন্তু যদি নামাজের বাইরের কেউ মুসাল্লিকে দেখে তার সম্পর্কে নামাজরত বলে ধারণা করা যায়, তাহলে এমতাবস্থায় মুসল্লির কাজকে ‘আমলে কালীল’ বলা হবে, এবং তখন নামাজ নষ্ট হবে না।

আমলে কাসিরের উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে, কেউ নামাজে সিজদা দিতে গিয়ে অথবা বৈঠকে থাকা অবস্থায় মাথা থেকে টুপি পড়ে গেল, সে টুপি উঠানোর জন্য দু্ই হাত এমনভাবে ব্যবহার করল, যাতে তাকে দেখে মনে হল সে নামাজ পড়ছে না, বরং নামাজের বাইরে অন্য সময় যেভাবে টুপি পড়ে থাকে সেভাবে পড়ছে। অথবা নামাজের সময় জামার হাতা উঠা-নামা করা। সিজদার স্থান থেকে কঙ্কর বা অন্য কোনও ময়লা সরানো। বারবার শরীর চুলকানো। মোবাইল বের করে দেখা। নামাজরত অবস্থায় আকাশের দিকে বা এদিক সেদিক দৃষ্টিপাত করা ইত্যাদি কাজকে আমলে কাসির বলে গণ্য করা হয়।

(সূত্র : ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত ৩/৪৮৫, ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬২৪-৬২৫, বায়েউস সানায়ে ১/২৪১, ফাতাওয়ায়ে কাযিখান-১/৬৩ আল-ফিকহুল হানাফি ফি ছাওবিহিল জাদীদ-১/২৪৮)

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আমলে কাসির কী? এর কারণে নামাজে যে সমস্যা হয়

আপডেট সময় ১২:৫৮:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর ২০২২

মনোযোগ ও একাগ্রতা নামাজের প্রাণ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তাকে তুমি দেখতে পাচ্ছো। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০; মুসলিম, হাদিস : ৮)

মানুষের মন-মস্তিষ্ক কখনো বেকার থাকে না। আর নামাজে দাঁড়ালে শয়তান বারবার মানুষের মনোযোগ বিভিন্ন দিকে ফিরিয়ে নিতে চায়। কিন্তু যেকোনোভাবে মনোযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করতে হয়। সুতরাং নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই কল্পনা (মুখে উচ্চারণ ছাড়া) ধরে রাখার অনুশীলন করা উচিত যে, ‘আল্লাহ আমাকে দেখছেন’।

মনোযোগ ধরে রাখার পাশাপাশি নামাজ যেন নষ্ট না হয়, ভেঙ্গে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। নামাজ যেসব কারণে ভেঙ্গে যায় তার একটি হলো- আমলে কাসির। কারো নামাজে আমলে কাসির ঘটলে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। এর কারণে আবার নতুন করে নামাজ পড়তে হয়।

ফুকাহায়ে কেরামের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত অনুযায়ী ‘আমলে কাসির’ বলা হয়, নামাজে এমন নড়াচড়াকে যে কারণে নামাজের বাইরের কেউ দেখলে মুসল্লি সম্পর্কে তার নিশ্চিত ধারণা জন্মে যে, এই মুসল্লি এখন আর নামাজে নেই। এ ধরনের কাজের মাধ্যমে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। 

কিন্তু যদি নামাজের বাইরের কেউ মুসাল্লিকে দেখে তার সম্পর্কে নামাজরত বলে ধারণা করা যায়, তাহলে এমতাবস্থায় মুসল্লির কাজকে ‘আমলে কালীল’ বলা হবে, এবং তখন নামাজ নষ্ট হবে না।

আমলে কাসিরের উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে, কেউ নামাজে সিজদা দিতে গিয়ে অথবা বৈঠকে থাকা অবস্থায় মাথা থেকে টুপি পড়ে গেল, সে টুপি উঠানোর জন্য দু্ই হাত এমনভাবে ব্যবহার করল, যাতে তাকে দেখে মনে হল সে নামাজ পড়ছে না, বরং নামাজের বাইরে অন্য সময় যেভাবে টুপি পড়ে থাকে সেভাবে পড়ছে। অথবা নামাজের সময় জামার হাতা উঠা-নামা করা। সিজদার স্থান থেকে কঙ্কর বা অন্য কোনও ময়লা সরানো। বারবার শরীর চুলকানো। মোবাইল বের করে দেখা। নামাজরত অবস্থায় আকাশের দিকে বা এদিক সেদিক দৃষ্টিপাত করা ইত্যাদি কাজকে আমলে কাসির বলে গণ্য করা হয়।

(সূত্র : ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত ৩/৪৮৫, ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬২৪-৬২৫, বায়েউস সানায়ে ১/২৪১, ফাতাওয়ায়ে কাযিখান-১/৬৩ আল-ফিকহুল হানাফি ফি ছাওবিহিল জাদীদ-১/২৪৮)