ঢাকা ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কুমিল্লা দেবীদ্বারে বঙ্গবন্ধুর জুলি ও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন পুলিশের বাধায় কুমিল্লায় বিএনপির পদযাত্রা পন্ড ঝিকরগাছায় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলেকে গুলি করে হত্যা চেষ্টা স্বেচ্ছায় মাদক, চুরি ছিনতাই ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কমিটি গঠন ব্র্যাকের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা দিবস পালিত বঙ্গবন্ধুর ’জুলিও কুরি” শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের আয়োজনে আন্তঃকলেজ সাঁতার প্রতিযোগিতা উদ্বোধন আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রাইজমানি ঘোষণা আইপিএল ফাইনাল আজ একদিনে আরও ৬৭ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি

‘হাতি আমার মনোরম কল্পনার প্রাণী’

দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। সুঅভিনয়ের বাইরে সমাজ-সচেতনও জয়া । বন্যপ্রাণী প্রেমী জয়া সম্প্রতি একটি হাতির করুন মৃত্যুতে খুবই কষ্ট পেয়েছেন। রাজধানীর উত্তরায় ট্রেনের ধাক্কায় মারা যাওয়া হাতির বাচ্চাটার কথা কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারছেন না জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী।

হাতির মৃত্যুর এ ঘটনায় আবারও ক্ষোভ প্রকাশ সামজিক মাধ্যমে। ফেসবুকে তার একটি স্ট্যাটাস পাঠকের জন্য তুলেহুবহু তুলে ধরা হল:

এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল, কিন্তু উত্তরায় বেঘোরে মারা পড়া হাতির বাচ্চাটার কথা মন থেকে কোনোভাবেই সরিয়ে দিতে পারছি না। সেই কিশোরীবেলা থেকে হাতি আমার মনোরম কল্পনার প্রাণী। শুধু আমার কেন, হাতির ছানাকে কে ভালোবেসে বড় হয়নি? কোনো প্রাণীকে দেখে আমরা ভয় পাই, কোনো প্রাণীর সৌন্দর্যে বিস্মিত হয়ে থাকি। কিন্তু হাতি? হাতি তো সব সময়েই আমাদের প্রাণী। হাতির ছানা তো আরও। রূপকথায়, মেঘের আকারে, অ্যানিমেশনে বন্ধু হিসেবে হাতিকে মনের রঙিন কল্পনার মধ্যে জায়গা দিতে দিতে আমরা বড় হয়েছি।

এমন একটি আদুরে হাতির ছানা কী মর্মান্তিকভাবেই না মারা পড়ল গত ১৭ মে। উত্তরায় রেললাইনের পাশে মা হাতির সঙ্গে ছানাটিও কলাগাছ খাচ্ছিল। এমন সময় ট্রেন এসে পড়ে। ট্রেনের চালক কাওছার হোসেন বলেছেন, একশ মিটার দূরে থাকতে হাতিটি তাদের নজরে আসে। তখন তারা হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করেন। ট্রেন থামতে দুইশ থেকে তিনশ মিটার জায়গা লাগে। ফলে দুর্ঘটনাটি এড়ানো যায়নি। হুইসেলের শব্দে হাতির শাবকটি ভয় পেয়ে দৌড় দিতে শুরু করে। কিন্তু যন্ত্রসভ্যতার আইনকানুন বেচারা জানবে কোত্থেকে? সে দৌড়াতে শুরু করে রেললাইনেরই ওপর দিয়ে। ট্রেন ওর ওপরে এসে পড়ে। ওকে হিঁচড়ে নিয়ে যায় বহুদূর পর্যন্ত। শহরে অচেনা এই আগন্তুক লাশ হয়ে যায়।

ট্রেনচালক কাওছার হোসেন প্রশ্ন করেছেন, ‘বন্য প্রাণী কেন রেললাইনে থাকবে? হাতির তো লোকালয়ে আসারই কথা নয়।’ এটা আমাদেরও প্রশ্ন।

যার ঘুরে বেড়ানোর কথা অরণ্যের সবুজে, ওর আপন পৃথিবীতে, সে ও কেন ওর অচেনা লোকালয়ে আসবে? আইইউসিএন বলছে, এশিয়ান হাতি তাদের লাল তালিকায় থাকা মহাবিপদাপন্ন প্রাণী। যত্ন না নিলে ম্যামথের মতো একদিন হারিয়ে যাবে তারা। হাতি টিকে থাকবে শুধু গল্পগাঁথার অস্পষ্ট স্মৃতির ভেতরে। তেমন পৃথিবীই কি আমরা চাই?
হাতি লোকালয়ে আসছে তার পেছনে আছে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২–এর ২ উপধারা। সেখানে বলা হয়েছে, সনদ নিয়ে হাতি লালন–পালন করা যাবে। তবে সনদ নেওয়ার আগে নিশ্চিত হতে হবে পালনকারীর হাতি পালন করার মতো পর্যাপ্ত জ্ঞানগম্যি এবং হাতির বেঁচে থাকার মতো পুরো সুযোগ–সুবিধা দেওয়ার সক্ষমতা আছে কি-না।

তাই নাকি? সনদ দেওয়ার পরে কী হবে? এই যে হাতি হাতবদল হয়ে যাচ্ছে, শারীরিক যন্ত্রণা দিয়ে ওদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, চাঁদা তোলার কাজে শহরের প্রতিকূল রাজপথে চরিয়ে বেড়ানো হচ্ছে, সেটা কে দেখবে? এসব দৃশ্য তো আমরা চলতে–ফিরতে হরহামেশা দেখতে পাচ্ছি। দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের কি মোটেই চোখে পড়ছে না? তারা কি ঠিকমতো সনদ দিচ্ছেন? সনদ দেওয়ার পর কি আদৌ খোঁজ করে দেখছেন, নিয়ম পালিত হচ্ছে কিনা? হচ্ছে যে না, পথে পথে আমাদের নিজ চোখে দেখা অভিজ্ঞতাই তার প্রমাণ। আমাদের গাফিলতিই অবশেষে এই হাতির মৃত্যুর কারণ হলো। দুর্ঘটনা একটা ছুতো মাত্র।

বন্যপ্রাণীদের নিয়ে পৃথিবীজুড়ে ভাবনা বদলে যাচ্ছে। আমরা কি একগুঁয়ের মতো পৃথিবীর বাইরে থাকতে চাই? মহাবিপদাপন্ন একটি প্রাণীকে কোনোভাবেই আমরা তাদের নিজস্ব পরিবেশের বাইরে এনে আটকে রাখতে পারি না। তাই এই আইনটি সংশোধন করতে হবে। এ ব্যাপারে আওয়াজ তোলার জন্য আমি দেশের প্রাণীবিদদের, প্রাণী অধিকারকর্মী আর সব সংবেদনশীল মানুষকে অনুরোধ করছি।

আরও একটি কথা বলা দরকার। মাঝেমধ্যেই আমরা হাতি আর মানুষের সংঘর্ষের কথা শুনছি। এর জের পড়ছে দুই দিকেই। মানুষও ক্ষতির শিকার হচ্ছে, মারা পড়ছে হাতিও। অথচ এর মূল দায় তো আমাদেরই। আমরা বন উজাড় করছি। হাতির বুনো চলাচলের পথ বন্ধ করে আবাস করছি। হাতির বেঁচে থাকার কোনো জায়গাই অবশিষ্ট রাখছি না। পৃথিবীর বিচিত্র প্রাণসত্তার রঙিন সৌন্দর্য টিকে থাকবে কিনা, সেটা নির্ভর করছে আমাদের দয়ার ওপর।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কুমিল্লা দেবীদ্বারে বঙ্গবন্ধুর জুলি ও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন

‘হাতি আমার মনোরম কল্পনার প্রাণী’

আপডেট সময় ১২:০৫:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩

দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। সুঅভিনয়ের বাইরে সমাজ-সচেতনও জয়া । বন্যপ্রাণী প্রেমী জয়া সম্প্রতি একটি হাতির করুন মৃত্যুতে খুবই কষ্ট পেয়েছেন। রাজধানীর উত্তরায় ট্রেনের ধাক্কায় মারা যাওয়া হাতির বাচ্চাটার কথা কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারছেন না জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী।

হাতির মৃত্যুর এ ঘটনায় আবারও ক্ষোভ প্রকাশ সামজিক মাধ্যমে। ফেসবুকে তার একটি স্ট্যাটাস পাঠকের জন্য তুলেহুবহু তুলে ধরা হল:

এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল, কিন্তু উত্তরায় বেঘোরে মারা পড়া হাতির বাচ্চাটার কথা মন থেকে কোনোভাবেই সরিয়ে দিতে পারছি না। সেই কিশোরীবেলা থেকে হাতি আমার মনোরম কল্পনার প্রাণী। শুধু আমার কেন, হাতির ছানাকে কে ভালোবেসে বড় হয়নি? কোনো প্রাণীকে দেখে আমরা ভয় পাই, কোনো প্রাণীর সৌন্দর্যে বিস্মিত হয়ে থাকি। কিন্তু হাতি? হাতি তো সব সময়েই আমাদের প্রাণী। হাতির ছানা তো আরও। রূপকথায়, মেঘের আকারে, অ্যানিমেশনে বন্ধু হিসেবে হাতিকে মনের রঙিন কল্পনার মধ্যে জায়গা দিতে দিতে আমরা বড় হয়েছি।

এমন একটি আদুরে হাতির ছানা কী মর্মান্তিকভাবেই না মারা পড়ল গত ১৭ মে। উত্তরায় রেললাইনের পাশে মা হাতির সঙ্গে ছানাটিও কলাগাছ খাচ্ছিল। এমন সময় ট্রেন এসে পড়ে। ট্রেনের চালক কাওছার হোসেন বলেছেন, একশ মিটার দূরে থাকতে হাতিটি তাদের নজরে আসে। তখন তারা হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করেন। ট্রেন থামতে দুইশ থেকে তিনশ মিটার জায়গা লাগে। ফলে দুর্ঘটনাটি এড়ানো যায়নি। হুইসেলের শব্দে হাতির শাবকটি ভয় পেয়ে দৌড় দিতে শুরু করে। কিন্তু যন্ত্রসভ্যতার আইনকানুন বেচারা জানবে কোত্থেকে? সে দৌড়াতে শুরু করে রেললাইনেরই ওপর দিয়ে। ট্রেন ওর ওপরে এসে পড়ে। ওকে হিঁচড়ে নিয়ে যায় বহুদূর পর্যন্ত। শহরে অচেনা এই আগন্তুক লাশ হয়ে যায়।

ট্রেনচালক কাওছার হোসেন প্রশ্ন করেছেন, ‘বন্য প্রাণী কেন রেললাইনে থাকবে? হাতির তো লোকালয়ে আসারই কথা নয়।’ এটা আমাদেরও প্রশ্ন।

যার ঘুরে বেড়ানোর কথা অরণ্যের সবুজে, ওর আপন পৃথিবীতে, সে ও কেন ওর অচেনা লোকালয়ে আসবে? আইইউসিএন বলছে, এশিয়ান হাতি তাদের লাল তালিকায় থাকা মহাবিপদাপন্ন প্রাণী। যত্ন না নিলে ম্যামথের মতো একদিন হারিয়ে যাবে তারা। হাতি টিকে থাকবে শুধু গল্পগাঁথার অস্পষ্ট স্মৃতির ভেতরে। তেমন পৃথিবীই কি আমরা চাই?
হাতি লোকালয়ে আসছে তার পেছনে আছে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২–এর ২ উপধারা। সেখানে বলা হয়েছে, সনদ নিয়ে হাতি লালন–পালন করা যাবে। তবে সনদ নেওয়ার আগে নিশ্চিত হতে হবে পালনকারীর হাতি পালন করার মতো পর্যাপ্ত জ্ঞানগম্যি এবং হাতির বেঁচে থাকার মতো পুরো সুযোগ–সুবিধা দেওয়ার সক্ষমতা আছে কি-না।

তাই নাকি? সনদ দেওয়ার পরে কী হবে? এই যে হাতি হাতবদল হয়ে যাচ্ছে, শারীরিক যন্ত্রণা দিয়ে ওদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, চাঁদা তোলার কাজে শহরের প্রতিকূল রাজপথে চরিয়ে বেড়ানো হচ্ছে, সেটা কে দেখবে? এসব দৃশ্য তো আমরা চলতে–ফিরতে হরহামেশা দেখতে পাচ্ছি। দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের কি মোটেই চোখে পড়ছে না? তারা কি ঠিকমতো সনদ দিচ্ছেন? সনদ দেওয়ার পর কি আদৌ খোঁজ করে দেখছেন, নিয়ম পালিত হচ্ছে কিনা? হচ্ছে যে না, পথে পথে আমাদের নিজ চোখে দেখা অভিজ্ঞতাই তার প্রমাণ। আমাদের গাফিলতিই অবশেষে এই হাতির মৃত্যুর কারণ হলো। দুর্ঘটনা একটা ছুতো মাত্র।

বন্যপ্রাণীদের নিয়ে পৃথিবীজুড়ে ভাবনা বদলে যাচ্ছে। আমরা কি একগুঁয়ের মতো পৃথিবীর বাইরে থাকতে চাই? মহাবিপদাপন্ন একটি প্রাণীকে কোনোভাবেই আমরা তাদের নিজস্ব পরিবেশের বাইরে এনে আটকে রাখতে পারি না। তাই এই আইনটি সংশোধন করতে হবে। এ ব্যাপারে আওয়াজ তোলার জন্য আমি দেশের প্রাণীবিদদের, প্রাণী অধিকারকর্মী আর সব সংবেদনশীল মানুষকে অনুরোধ করছি।

আরও একটি কথা বলা দরকার। মাঝেমধ্যেই আমরা হাতি আর মানুষের সংঘর্ষের কথা শুনছি। এর জের পড়ছে দুই দিকেই। মানুষও ক্ষতির শিকার হচ্ছে, মারা পড়ছে হাতিও। অথচ এর মূল দায় তো আমাদেরই। আমরা বন উজাড় করছি। হাতির বুনো চলাচলের পথ বন্ধ করে আবাস করছি। হাতির বেঁচে থাকার কোনো জায়গাই অবশিষ্ট রাখছি না। পৃথিবীর বিচিত্র প্রাণসত্তার রঙিন সৌন্দর্য টিকে থাকবে কিনা, সেটা নির্ভর করছে আমাদের দয়ার ওপর।