ঢাকা ১০:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ১৩ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

জমাদিউস সানি মাসে যে বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখবেন

আরবি বর্ষপঞ্জি ও ইসলামি হিজরি সনের ষষ্ঠ মাস হলো জমাদিউস সানি। এর জোড়া মাস হলো ‘জমাদিউল আউয়াল’। জমাদিউস সানির বাংলা অর্থ হলো দ্বিতীয় শীত; অর্থাৎ শীতকালের দ্বিতীয় মাস। তখনকার সময়ে আরবে এই দুই মাস ছিল শীতকাল। 

আরবিতে এই মাসের নাম হলো ‘আল জুমাদাল উখরা’ বা ‘আল জুমাদাল আখিরাহ’ অথবা ‘আল জুমাদাস সানিয়াহ’। তবে ভারতীয় উপমহাদেশে মাসটি ‘জমাদিউস সানি’ নামে সর্বাধিক পরিচিত। (আল মুনজিদ)।

ইসলামী শরিয়তে প্রত্যেক মাস ও সপ্তাহে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যেমন সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুই দিন রোজা রাখতেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন-  বৃহস্পতি ও সোমবার আল্লাহ তায়ালার সামনে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়, তাই আমি চাই- আমার আমল পেশ করার সময় আমি যেন রোজা অবস্থায় থাকি। -(সুনানে নাসায়ী, ২৩৫৮)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আ’মর ইবনে আ’স রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়াম পালন, সারা বছর ধরে সিয়াম পালনের সমান।’- (বুখারী, ১১৫৯, ১৯৭৫)

এছাড়া প্রতি সপ্তাহে অথবা যেকোনও সময় কবর জিয়ারতের কথা আছে হাদিসে। আল্লাহর রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে,, ‘যে ব্যক্তি প্রতি জুমায় তার মা-বাবা বা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।’ (আল-মুজামুল আউসাত, হাদিস : ৬১১৪)।

মৃত স্বজনের জন্য মাগফেরাত কামনা

স্বজনের মধ্যে যারা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, তারা পৃথিবীবাসীর পক্ষ থেকে আমল ও সওয়াব পাওয়ার প্রত্যাশা করে থাকেন।

হাদীস শরীফে এসেছে, ‘মানুষকে যখন কবরে দাফন করা হয়, তখন তার অবস্থা ডুবন্ত মানুষের ন্যায় হয়ে যায়। নদীতে বা সাগরে যদি জাহাজ তলিয়ে যায়, তখন মানুষ যেমন দিশেহারা হয়ে চতুর্দিকে হাত মারতে থাকে এই ধারণায় যে, হাতে কোন কিছু আসে কি-না। যে আঁকড়ে ধরে সে জানে বাঁচাতে পারে। মুর্দারও সেই অবস্থাই হয় এবং সে জিবিতদের সাওয়াব রেসানীর অপেক্ষা করতে থাকে। তখন তার আপনজন, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধব যদি কিছু সাওয়াব রেসানী করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা সেটাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে তাদের খেদমতে জীবিতদের পক্ষ থেকে হাদিয়া হিসেবে পৌঁছে দেন’। (বাইহাকী, শুআবুল ঈমান, ৭৫২৭)

রাতের নফল নামাজ-ইবাদত

বাংলাদেশে এই মাসটি যেহেতু শীতকালে তাই এ সময় রাত অনেক দীর্ঘ ও দিন একেবারে ছোট হয়ে যায়। তাই চাইলেই রাত্রিকালীন নফল ইবাদত, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন যেকেউ।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শীতকালকে মুমিনের বসন্তকাল বলেছেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’ -(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১১৬৫৬)

প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘শীতকালকে স্বাগতম। কেননা তা বরকত বয়ে আনে। রাতগুলো দীর্ঘ হয়। ফলে তা ‘কিয়ামুল লাইল’র জন্য (রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ) সহায়ক এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে সহজ।’ (আল-মাকাসিদুল হাসানা, হাদিস : ২৫০)

মোটাকথা অন্যান্য মাস বা সময়ের মতো এই মাসেও এ আমলের প্রতিও খেয়াল রাখা যেতে পারে। তবে এই আমলগুলোকে এই মাসের জন্য অবশ্যক বা মাস হিসেবে এর আলাদা বিশেষ কোনও ফজিলত আছে এমন মনে করা যাবে না।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শার্শায় বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদের কবরে বিজিবির গার্ড অফ অনার ও দোয়ার অনুষ্ঠান

জমাদিউস সানি মাসে যে বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখবেন

আপডেট সময় ০২:২২:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২

আরবি বর্ষপঞ্জি ও ইসলামি হিজরি সনের ষষ্ঠ মাস হলো জমাদিউস সানি। এর জোড়া মাস হলো ‘জমাদিউল আউয়াল’। জমাদিউস সানির বাংলা অর্থ হলো দ্বিতীয় শীত; অর্থাৎ শীতকালের দ্বিতীয় মাস। তখনকার সময়ে আরবে এই দুই মাস ছিল শীতকাল। 

আরবিতে এই মাসের নাম হলো ‘আল জুমাদাল উখরা’ বা ‘আল জুমাদাল আখিরাহ’ অথবা ‘আল জুমাদাস সানিয়াহ’। তবে ভারতীয় উপমহাদেশে মাসটি ‘জমাদিউস সানি’ নামে সর্বাধিক পরিচিত। (আল মুনজিদ)।

ইসলামী শরিয়তে প্রত্যেক মাস ও সপ্তাহে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যেমন সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুই দিন রোজা রাখতেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন-  বৃহস্পতি ও সোমবার আল্লাহ তায়ালার সামনে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়, তাই আমি চাই- আমার আমল পেশ করার সময় আমি যেন রোজা অবস্থায় থাকি। -(সুনানে নাসায়ী, ২৩৫৮)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আ’মর ইবনে আ’স রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়াম পালন, সারা বছর ধরে সিয়াম পালনের সমান।’- (বুখারী, ১১৫৯, ১৯৭৫)

এছাড়া প্রতি সপ্তাহে অথবা যেকোনও সময় কবর জিয়ারতের কথা আছে হাদিসে। আল্লাহর রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে,, ‘যে ব্যক্তি প্রতি জুমায় তার মা-বাবা বা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।’ (আল-মুজামুল আউসাত, হাদিস : ৬১১৪)।

মৃত স্বজনের জন্য মাগফেরাত কামনা

স্বজনের মধ্যে যারা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, তারা পৃথিবীবাসীর পক্ষ থেকে আমল ও সওয়াব পাওয়ার প্রত্যাশা করে থাকেন।

হাদীস শরীফে এসেছে, ‘মানুষকে যখন কবরে দাফন করা হয়, তখন তার অবস্থা ডুবন্ত মানুষের ন্যায় হয়ে যায়। নদীতে বা সাগরে যদি জাহাজ তলিয়ে যায়, তখন মানুষ যেমন দিশেহারা হয়ে চতুর্দিকে হাত মারতে থাকে এই ধারণায় যে, হাতে কোন কিছু আসে কি-না। যে আঁকড়ে ধরে সে জানে বাঁচাতে পারে। মুর্দারও সেই অবস্থাই হয় এবং সে জিবিতদের সাওয়াব রেসানীর অপেক্ষা করতে থাকে। তখন তার আপনজন, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধব যদি কিছু সাওয়াব রেসানী করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা সেটাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে তাদের খেদমতে জীবিতদের পক্ষ থেকে হাদিয়া হিসেবে পৌঁছে দেন’। (বাইহাকী, শুআবুল ঈমান, ৭৫২৭)

রাতের নফল নামাজ-ইবাদত

বাংলাদেশে এই মাসটি যেহেতু শীতকালে তাই এ সময় রাত অনেক দীর্ঘ ও দিন একেবারে ছোট হয়ে যায়। তাই চাইলেই রাত্রিকালীন নফল ইবাদত, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন যেকেউ।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শীতকালকে মুমিনের বসন্তকাল বলেছেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’ -(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১১৬৫৬)

প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘শীতকালকে স্বাগতম। কেননা তা বরকত বয়ে আনে। রাতগুলো দীর্ঘ হয়। ফলে তা ‘কিয়ামুল লাইল’র জন্য (রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ) সহায়ক এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে সহজ।’ (আল-মাকাসিদুল হাসানা, হাদিস : ২৫০)

মোটাকথা অন্যান্য মাস বা সময়ের মতো এই মাসেও এ আমলের প্রতিও খেয়াল রাখা যেতে পারে। তবে এই আমলগুলোকে এই মাসের জন্য অবশ্যক বা মাস হিসেবে এর আলাদা বিশেষ কোনও ফজিলত আছে এমন মনে করা যাবে না।